শুক্রবার দুপুরের পর আর চাকরি নেই রাজ্যের ১৯১১ জন গ্রুপ-ডি স্টাফের। এরা সকলেই এসএসসির মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে রাজ্যে বিভিন্ন স্কুলে গ্রুপ-ডি পদে নিযুক্ত ছিল। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই ১৯১১ জন গ্রুপ-ডি কর্মীকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কারণ তদন্তে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে এরা সকলেই বেআইনি পথে পরীক্ষার উত্তরপত্রে কারচুপির সাহায্যে চাকরি পেয়েছিল।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে এসএসসি অর্থাৎ স্কুল সার্ভিস কমিশন ইতিমধ্যেই এই ১৯১১ জনের চাকরির সুপারিশ পত্র প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। তবে আইন অনুযায়ী তাদের বরখাস্ত করার কাজটি সারতে হবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে।
বাতিলদের নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে
সূত্রের খবর, ওই সমস্ত সরকারি কর্মীর নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়টি দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদও ব্যাপারটা নিয়ে কাল বিলম্ব না করে তাদের বরখাস্ত করবে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন, এই সকল সরকারি কর্মীদের তালিকা মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে দ্রুত তাদের ওয়েবসাইটে টাঙিয়ে দিতে হবে।
চাকরির বেতন সরকারকে ফেরত দিতে হবে
যে ১৯১১ জন গ্রুপ-ডি কর্মীর চাকরি গেল তাদেরকে এতদিন ধরে পেয়ে আসা বেতনও সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের তাঁর রায়ে জানিয়েছেন, প্রতি মাসে মাসে কিস্তিতে বেতনের অর্থ পরিশোধ করতে হবে ওই সমস্ত বরখাস্ত সরকারি কর্মীদের। তাঁদের শনিবার থেকেই আর স্কুলে ঢুকতে দেওয়া যাবে না বলেও তিনি নির্দেশ দেন।
বাতিলদের কোনো সরকারি চাকরির পরীক্ষাতে বসা থেকে বরখাস্ত
এই সমস্ত কর্মীদের ভবিষ্যতে অন্য কোনও চাকরির পরীক্ষায় বসতে দেওয়া বা অন্য কোনও সরকারি কাজে ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তিনি। জানিয়েছেন আদালতের নির্দেশ ছাড়া এদের কোনরকম সরকারি পরিসরে ব্যবহার করা চলবে না। এমনকি তদন্তের স্বার্থে সিবিআই (CBI) এই বরখাস্ত কর্মীদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে পারে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি।
বাতিলদের জায়গায় শূন্যপদে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু
এই এতজন গ্রুপ-ডি কর্মী বরখাস্ত হওয়ার পাশাপাশি তাদের শূন্যস্থান পূরণের প্রক্রিয়া নিয়েও সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। জানিয়েছেন ওয়েটিং লিস্টে যারা আছে তাদের মধ্যে থেকেই এই শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে। কিন্তু ওয়েটিং লিস্টেরও কেউ যদি উত্তরপত্র কারচুপিতে অভিযুক্ত থাকে, তবে তাকে বাদ দিয়ে কাজটি সারতে হবে। এর জন্য এসএসসি ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে তিন সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তিনি।
সুবীরেশ-এর উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা
দুর্নীতি করে চাকরি পাওয়াদের নিয়েই যে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শুধুমাত্র কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন তা নয়। এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে নিয়েও নজিরবিহীন রায় দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
কার নির্দেশে এত বড় দুর্নীতি তিনি সংঘটিত করেছিলেন তা যদি সুবীরেশ ভট্টাচার্য না বলেন তবে আদালত ধরে নেবে তিনি এই কেলেঙ্কারির মাস্টারমাইন্ড! সেই সঙ্গে যতদিন এই মামলার নিষ্পত্তি না হচ্ছে ততদিন তিনি ডক্টরেট ও মাস্টার ডিগ্রি ব্যবহার করতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন বিচারপতি। কোনও মামলায় একজনের ডিগ্রি এইভাবে ফ্রিজ করে দেওয়ার ঘটনাকে কার্যত নজিরবিহীন বলে মনে করছেন অনেকে।
আরো আপডেট: প্রাইমারী টেট ২০২২ রেজাল্ট প্রকাশিত হল-Check Now
পাশাপাশি বিচারপতি জানিয়েছেন যদি কারোর ভয়ে সুবিরেশ ভট্টাচার্য মূল অপরাধীর নাম বলতে না চান, তবে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সেক্ষেত্রে তাঁকে অবশ্যই মূল অপরাধীর নাম বলতে হবে।
শুক্রবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে রায় দিয়েছেন তাকে ঐতিহাসিক রায় বলে চিহ্নিত করেছে আইনজ্ঞ মহলের একাংশ। এদিকে দুর্নীতি করে চাকরি পাওয়াদের আদালত বরখাস্ত করায় খুশি বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা।
বি:দ্র: প্রতিদিন নতুন কোনো চাকরি এবং কাজের আপডেট সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আপডেট মিস করতে না চাইলে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হয়ে থাকুন।
🔥 গুরুত্বপূর্ণ লিংক: 👇👇👇👇
🔥 আরো আপডেট-👇👇