
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের আন্দোলন (WB DA Movement) চলছিল। শুধু আন্দোলন নয়, বরং অনশন আন্দোলন শুরু করেছিলেন তাঁরা। এর জেরে শহিদ মিনারের পাদদেশে সরকারি কর্মীদের আন্দোলন মঞ্চে অংশ নেওয়া দু’জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হন। যদিও এ নিয়ে রাজ্য সরকার বিশেষ কোনও ভ্রুক্ষেপ করেনি। উল্টে ফিরহাদ হাকিমের মত রাজ্য ক্যাবিনেটের কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য সরকারি কর্মীদের এই আন্দোলন নিয়ে কটাক্ষ করেন।
এই পরিস্থিতিতে শেষ অস্ত্র হিসেবে বকেয়ার ডিএ (DA) পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া সরকারি কর্মীরা জানিয়ে দেন, দ্রুত তাঁদের ডিএ না দিলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাঁরা অংশগ্রহণ করবেন না। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই ঘোষণার দু’দিনের মাথাতেই ছিল রাজ্য বাজেট (West Bengal Budget) পেশের দিন। আর সেই বাজেট পেশের সময়ই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা চিরকুট পেয়েই ৩% ডিএ-র কথা ঘোষণা করেন।
বুধবার বিধানসভায় বাজেট পেশের সময় অর্থমন্ত্রী যেভাবে ডিএ-র কথা ঘোষণা করেছেন তাতে প্রায় সকলেই মোটামুটি নিশ্চিত যে ডিএ বৃদ্ধির বিষয়টি মোটেও রাজ্য বাজেটে ছিল না। বরং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী (Mamata Banerjee) তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতাকে কাজে লাগিয়ে বাজেট পেশ চলাকালীনই চিরকুটে লিখে ডিএ দেওয়ার কথা জানান। আর তাই বাজেট পেশের একেবারে শেষ দিকে এসে মুখ্যমন্ত্রীর চিরকুট পেয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য মার্চ মাস থেকে ৩% ডিএ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এর ফলে বাংলার রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ-র পরিমাণ বেড়ে হল ৬%। ঘটনাচক্রে যা সারা দেশের মধ্যে সবথেকে কম। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মত আর কোনও রাজ্য সরকার এত কম ডিএ দেয় না।
কেন্দ্রীয় সরকার ৩৮ শতাংশ হারে ডিএ দিচ্ছে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সঙ্গে বাংলার সরকারি কর্মীদের ডিএ-র ফারাক ৩২%। আগামী মার্চ মাস থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মীরা এই বর্ধিত হারে ডিএ পাবেন। শোনা যাচ্ছে, মার্চ মাস থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার কর্মীদের জন্য আরও ৪ শতাংশ ডিএ-র কথা ঘোষণা করবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রের কর্মীদের ডিএ-র পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৪২%। আর তখন বাংলার রাজ্য সরকারি কর্মীদের থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ডিএ পাবে ৩৬% বেশি!
স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য সরকারের ৩ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণায় খুব একটা খুশি হননি রাজ্য সরকারি কর্মীর সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারি কর্মীদের তৃণমূলপন্থী ইউনিয়নও আশা করেছিল বাজেটে আরও বেশি হারে ডিএ বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করা হবে। কিন্তু তা না হওয়ায় তারাও হতাশ। যদিও দলীয় বাধ্যবাধকতার কারণে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছেন না।
হঠাৎ কেন ডিএ ঘোষণা করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার?
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ নিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা হওয়ার মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ডিএ সরকারি কর্মীদের অধিকার নয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে ডিএ সরকারি কর্মীদের অধিকার নয় বলে যখন রাজ্য সরকার মনে করে, তখন হঠাৎ করে বাজেটে কেন তারা তিন শতাংশ হারে ডিএ বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করল? বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, সুপ্রিম কোর্টের মামলায় সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতেই এইভাবে ৩ শতাংশ ডিএ-র কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য। যাতে তারা দেখাতে পারে, কর্মীদের দিয়ে ডিএ বাধ্যতামূলক মনে না করলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজের সাধ্যমত ডিএ দেয়।
এদিকে আরেকটি অংশের মতে, মার্চ মাসেই কেন্দ্রীয় সরকার আরও ৪% হারে ডিএ বাড়াতে চলেছে। এই খবর মোটামুটি নিশ্চিত হতেই প্রমাদ গোনেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বুঝতে পারেন, কেন্দ্র আরও ৪ শতাংশ ডিএ দিয়ে বাড়িয়ে দিলে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ক্ষোভ চরমে গিয়ে পৌঁছবে। তার আগে তিনি ৩ শতাংশ ডিএ দিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করলেন। তাছাড়া সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। এই সময় রাজ্য সরকারি কর্মীদের ক্ষোভ সামাল দেওয়া না গেলে ভোটে তার প্রভাব পড়তে পারে বলেও রাজনৈতিক মহলের আশঙ্কা। সব মিলিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীরা নতুন বছরের প্রথম দিকেই ৩ শতাংশ ডিএ পেলেন। ফলে তাঁদের মোট বেতনও বেশ কিছুটা বাড়ল। যদিও এইটুকু প্রাপ্তিতে তাঁরা মোটেও খুশি হতে পারছেন না।
প্রতিদিন নতুন কোনো চাকরি এবং কাজের আপডেট মিস করতে না চাইলে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ অথবা টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হয়ে থাকুন।
গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কগুলি (Important Links)
✅ WHATSAPP GROUP: Click Here
✅ TELEGRAM GROUP: Click Here
🔥 আরো আপডেট- Click Here